থেমে নেই চোরাচালান
সীমান্তের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষসহ অবৈধ পণ্য
- আপলোড সময় : ০৪-০৬-২০২৫ ০৯:২০:১৭ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৬-২০২৫ ০৯:২০:১৭ পূর্বাহ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি ::
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার ৬টি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু পাচার করছে বিভিন্ন চক্র। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত চোরাচালানী চক্র বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু পাচার করছে। আবার এপার থেকেও ওপারে মাছ, শুঁটকি, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার করছে। ভারত-বাংলাদেশের উত্তেজনার মধ্যেও এই চোরাচালান থেমে নেই বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ৫ মাসে সুনামগঞ্জের ৪৬৫টি গরু আটক করা হয়েছে। যার সর্বমোট সিজার মূল্য ৪ কোটি ১০ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে পাচারকৃত এই অবৈধ শত শত গরু সীমান্ত এলাকার গরু বাজারের অসাধু ইজারাদাররা হাসিল দিয়ে বৈধতা দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় গরুর ‘নাগরিকত্ব’ দিয়ে বাংলাদেশি খামারিদের ক্ষতির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে।
সীমান্ত এলাকার সচেতন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানী চক্র গরু, মহিষ, চিনি, বিভিন্ন প্রজাতির প্রসাধনী, চকলেট, নুডুলস, শাড়ি-কাপড়, কাঁচা সুপারি, চাপাতা, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য আনছে অবাধে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে ছোলাবুট, শুকনো সুপারি, মটরশুটি, রসুন, মাছ, শুঁটকি, মোরগ ইত্যাদি পণ্য।
জানা গেছে, মধ্যনগর উপজেলার মহিষখলা, কাইটাকোণা, কড়ইবাড়ী, গঙ্গানগর, ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটা সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন গরু ঢুকছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার পেকপাড়া, বাঁশতলা, কলাউড়া, বাগানবাড়ি, বোগলা, ভাঙ্গাপাড়া, মাঠগাঁওসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে গরু, মহিষসহ নানা ধরনের ভারতীয় পণ্য আসছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও কিছু পণ্য ঢুকছে।
তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী দিয়েও গরু, মহিষ ও ঘোড়া আনা হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতকের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে এভাবে গরুসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে চোরাচালানীর মাধ্যমে আনা হচ্ছে।
মধ্যনগর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলার কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গরু, মহিষসহ ভারতীয় অবৈধ পণ্য দেশে আনছে চোরাকারবারিরা। তাদের কারণে এলাকার যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। তারা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দোয়ারাবাজার উপজেলার পেকপাড়া সীমান্তের এক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন রাত ১১টার পরই গরুর পাল নামানো হয়। এগুলো হাটের ইজারাদাররা নামানোর আগেই তারিখ না বসিয়ে হাসিল দিয়ে রাখে। এভাবে বৈধতা পায় চোরাচালানের গরু। এই চোরাকারবারিরা দেশ থেকে মাছ, শুঁটকি পাচার করে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে উল্টো ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি মো. জাহিদুল হক বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা দেখার দায়িত্ব বিজিবি’র। তবে আমরাও সাধ্যমতো সীমান্ত এলাকার বাইরে এসব অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেই। অভিযান চালাই। পুলিশ এসব কাজে জড়িত নয়।
সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে.ক. জাকারিয়া কাদির বলেন, আমরা প্রতিদিনই নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে চোরাচালানের নানা পণ্য আটক করি। তারপরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা মাঝে-মধ্যে চোরাচালান করছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ